২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

কন্যাশিশুর বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ বছর বহাল রাখার দাবিতে গোলটেবিল বৈঠক

 

girlchild_rtable‘বাল্যবিবাহের হারের দিক থেকে বাংলাদেশ লজ্জাজনক অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করা হলে তা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি লজ্জাজনক বিষয় হবে’ মন্তব্য করেছেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি ২০ নভেম্বর ২০১৬, সকাল ১০.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত ‘আইনে কন্যাশিশুর বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ বছর বহাল রাখার দাবিতে’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এই মন্তব্য করেন। জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর আয়োজনে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় উক্ত গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দেশের সকল সচেতন মানুষই মেয়েদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর বহাল রাখা উচিত বলে মনে করেন। কিন্তু যারা কুম্ভকূর্ণ তাদের ঘুম কীভাবে ভাঙ্গবে?’ তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তারা অপরিপক্ক শরীরে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তাদের অনেকে অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয়। অন্যদিকে বাল্যবিয়ে বন্ধ করে মেয়েদের বিকশিত হওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে তারা শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান হয় এবং উপার্জনের সুযোগ পায়, যে উপার্জন তারা পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করে।’

তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ সংঘটিত হওয়ার মূল কারণ হলো সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। বর্তমানে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, অপ ছাত্র রাজনীতি ও বখাটেপনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য দূর করতে হবে।’

উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আমাদের সময় ডটকমের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড উইমেন স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারপার্সন জনাব তানিয়া হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র-এর সভাপতি জনাব নাছিমুন আরা হক মিনু। এছাড়া উপস্থিত সাংবাদিকগণ আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর বহাল রাখার যৌক্তিকতা ও বাল্যবিবাহ বন্ধে করণীয় সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরেন।

নাইমুল ইসলাম খান বলেন, ‘আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ বছর করা হলে এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের বিয়ে দেয়া বৈধতা পাবে। কারণ সব বিয়েই বাবা-মায়ের সম্মতিতেই হয়। তাছাড়া ১৬ রাখা হলে বেশিরভাগ বাবা-মা-ই ১৬ তে তাদের মেয়েকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। তাই শর্তহীনভাবে আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর বহাল রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে দরিদ্রতার চেয়েও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। তাই মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধে এনজিওদের সমন্বয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা, সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘টক শো’ আয়োজন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

জনাব তানিয়া হক বলেন, ‘প্রায় ১০০ বছর আগে বেগম রোকেয়া মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম ২১ হওয়া উচিত মন্তব্য করেছিলেন। অথচ বর্তমানে সরকার অযৌক্তিকভাবে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করার চিন্তা করছে। আমরা মেয়েদের ক্ষতি করে বহির্বিশ্বে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জল করার কথা ভাবছি। এটা সামগ্রিক রাজনৈতিক খেলার অংশ, যা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।’ মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো হলে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের নাম পরিবর্তন করে ‘বাল্যবিবাহ প্রয়োগ আইন’ রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উপরোক্ত গোলটেবিল বৈঠক থেকে যেসব সুপারিশ উঠে আসে তা হলো:

আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে নূন্যতম ১৮ বছর বহাল রাখার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রবন্ধ এবং ফিচার প্রকাশ করা;
মেয়েদের বিয়ের বয়য়ের ক্ষেত্রে ১৮ সাথে কোনো শর্ত জুড়ে না দিতে ব্যাপক গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা; এক্ষেত্রে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর উদ্যোগে যৌথ উদ্যোগে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলা;
বাল্যবিবাহ বন্ধে জাতীয় পর্যায়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং সফলতার গল্পগুলো তুলে ধরা;
বাল্যবিবাহ এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন নিয়ে টেলিভিশনে ‘টক-শো’র আয়োজন করা;
বাল্যবিবাহ বন্ধে সমাজের সকল নারী-পুরুষকে যুক্ত করা;
বাল্যবিবাহ বন্ধে মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা;
বাল্যবিবাহ বন্ধে বিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রচারাভিযান পরিচালনা করা;
বিয়ের বয়স না কমাতে শিশুদের দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখানোর ব্যবস্থা করানো;
বাল্যবিবাহ বন্ধে বাবা-মা, শিক্ষক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা;
মেয়েদের বিয়ের বয়স না কমাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে বিবৃতি প্রদান এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠক করা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১০টি টেলিভিশন চ্যানেল এবং ২০টি মত জাতীয় ও অনলাইন দৈনিক উক্ত গোলটেবিল বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ করে এবং নিজ নিজ গণমাধ্যমে তা প্রচার করে।