
০৯ ডিসেম্বর, ২০২০
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটানোর লক্ষে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ১৬ দিনব্যাপী ক্যা¤েপইন এর অংশ হিসেবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে ও এড’কো বাংলাদেশের সহায়তায় আজ ০৯ ডিসেম্বর, ২০২০, বিকাল ৩টায়, “ছেলে শিশু ও পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আমাদের করণীয় ” শীর্ষক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি ¯িপকার এডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটস-এর সভাপতি এডভোকেট মো: শামসুল হক টুকু এমপি এবং সহসভাপতি জনাব এ্যারোমা দত্ত এমপি ।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. মেহতাব খানম,প্রাক্তন চেয়ারম্যান, শিক্ষা ও কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সমাপনী বক্তব্য রাখেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের স¤পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি। সভায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন আদিবা আঞ্জুম মিতা এমপি, সাইকোথেরাপিস্ট অধ্যাপক সানজিদা শাহরিয়া, অধিকারকর্মী শিপা হাফিজা, ডা. রাজীব উর রহমান, জেণ্ডার বিশেষজ্ঞ নিশাত সুলতানা, অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন, অপরাজেয় বাংলার নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, ডা লেনিন চৌধুরী
এডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি বলেন, আমি অনুরোধ করব আজকের আলোচনার সারমর্ম করে একটি প্রস্তাবনা ককাস অন চাইল্ড রাইটস-এর সভাপতির মাধ্যমে সংসদে বেসরকারি বিল হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য। এছাড়া প্রস্তাবনাটি আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিশু বা মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও সংসদে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
মো: শামসুল হক টুকু এমপি বলেন, সন্তান ভ’মিষ্ট হওয়ার পর পরিবার থেকে বিভাজন করে দিচ্ছি যে ছেলে হলে একরকম আচরণ করতে হবে, মেয়ে হলে আরেকরকম আচরণ করতে হবে। এই জায়গা থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম অনেকগুলো প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। সরকার প্রস্তাবগুলো নিয়ে নিশ্চয় ভাববে। কিন্তু পরিবার থেকেও আমাদের ভাবতে হবে, পরিবারকে শিক্ষা দিতে হবে যে সন্তান ছেলে মেয়ে হোক একই আচরণ করতে হবে।
আদিবা আঞ্জুম মিতা এমপি বলেন, আজকাল বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারে না, মাঠে যেতে পারে না। শুধু স্কুলে যায় আর আসে। বের হতে লজ্জাবোধ করে। বাইরের সাথে মিশতে না পারার কারণেই এইসব মানসিক সমস্যা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।
এ্যারোমা দত্ত এমপি বলেন, ছেলে সন্তানকে এমনভাবে মানুষ করতে হবে যাতে সে নিজের এবং অন্যের জন্য সুন্দর জীবন গড়তে পারে। সাইকো সোশাল কাউন্সিলিং অবশ্যই দরকারি বলে আমি মনে করি। আমাদের কালচারের সাথে সামঞ্জস্য করে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে কীভাবে এটি নিয়ে আসা যায় সেটা আমাদের ভাবতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার কন্যাশিশুদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ও বৈষম্যের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে জাতীয় কন্ম্যাশিশু ও এডভোকেসি ফোরাম গঠিত হয়। সাধারণত আমরা দেখি যে নারীরা পুরুষদের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়। এইসব পুরুষদের বিরাট অংশ বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগেন। নারীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলচনা হয়, কিন্তু পুরুষদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা তেমন একটা হয় না। পুরুষদের এসব সমস্যা নিয়ে আলাপ করার জন্যই আমাদের আজকের এই আলোচনা।
ড. মেহতাব খানম বলেন, এরকম আলোচনা খুব একটা হয় না। আমার কাছে মনে হয় যে, আমরা মনযোগ বেশি দিচ্ছি প্রতিকারের জায়গায়, কিন্তু প্রতিরোধের জায়গায় মনযোগ দিচ্ছি না। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বিষয়টা লক্ষ করছি। যখন অবস্থা খারাপের দিকে যায় তখন আমরা মানসিক সমস্যা প্রকাশ করি। কেউ মানসিক সমস্যা প্রকাশ করতে চান না। পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় একদমই প্রকাশ করতে চান না। তথচ মানসিক সমস্যার বীজ ছোটবেলা থেকেই বপণ হয়। তাই আমাদের এসব সমস্যা প্রতিকারে জোর দিতে হবে।
সানজিদা শাহরিয়া বলেন, আমাদের কিছু সামাজিক মেসেজ থাকে যেগুলো পরিবারের ছোট শিশুটি পায়। প্রথম মেসেজ হচ্ছে ছেলেদের কাঁদতে নেই, ভয় পেতে নেই। একটা ছেলেকে ভয় পাওয়ার, দুঃখ পাওয়ার অনুমতিটা আমরা দেই না। মানুষের মৌলিক অনুভ’তি হচ্ছে চারটা – আনন্দ, দুঃখ, ভয় এবং রাগ। সেখানে আমরা যদি ভয় এবং দুঃখ এই দুইটা অনুভ’তি প্রথমেই বন্ধ করে দেই, তাহলে ছেলেটার হাতে আমরা শুধু দুটো অনুভ’তি তুলে দিচ্ছি- রাগ আর আনন্দ। কাজেই ছোটবেলা থেকে ছেলেটা শিখছে আমি যখন রাগ হব তখনো প্রকাশ করব রাগ দিয়ে, দুঃখ পেলেও প্রকাশ করব রাগ দিয়ে, ভয় পেলেও প্রকাশ করব রাগ দিয়ে। অরিজিনাল রাগ ছিল একটা। ছেলেরা ছোটবেলা থেকেই একটা রাগের ঘটনা তিনটা রাগ দিয়ে প্রকাশ করে। কাজেই ছেলেদের আমরাই সহিংস করে তুলছি।
শিফা হাফিজ বলেন, জেণ্ডার, বৈষম্য এসবের আলচনায় আমরা পুরুষদের বাদ দিয়ে ফেলি, ফলে আমাদের আলোচনা সফলতা লাভ করে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। নারী- পুরুষ একসাথে কাজ করার মানসিকতা ছোটবেলা থেকেই তৈরি করতে হবে।
ডা লেনিন চৌধুরী বলেন, সমাজের ভাষাথেকে শুরু করে চিন্তা প্রক্রিয়া সর্বত্র নারীর প্রতি অবমাননার চর্চা করা হয়। কাজেই এর থেকে মুক্তি পেতে হলে একটা সামগ্রিক এপ্রোচ দরকার।
ডা. রাজীব উর রহমান বলেন, কমিউনিকেশন ব্রিজ দরকার। মা-বাবার সাথে সন্তানের যোগাযোগের একটা বিশাল গ্যাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। ফ্যামিলতে যখন মা বাবার সাথে সন্তানের স¤পর্ক ভালো হবে তখন অনেক কিছু ইতিবাচক হয়ে যাবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে মন সুস্থ রাখার জন্য শরীর ও মন দুইটাই সুস্থ রাখতে হবে।
নিশাত সুলতানা বলেন, আমরা পুরুষদের বিহেভিয়ার পরিবর্তনের কথা আমরা বলছি। গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পুরুষতন্ত্রের ক্ষতিকর দিকগুলো পুরুষদের সামনে তুলে ধরা দরকার। পুরুষতন্ত্র যে পুরুষদের অবস্থানকেও ভক্সগুর করে তুলেছে সেটা তুলে ধরতে হবে। তা নাহলে পুরুষরা এই ক্ষেত্রে ভ’মিকা রাখতে পারবে না। এছাড়া পুরুষদের রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে হবে।
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, এই বিজয়ের মাসে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, একটা পতাকা পেয়েছে। এমন একটা সময়ে আমাদের আজকের আলোচনা জাতির জন্য অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।