
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে ১৪ মার্চ ২০২৩ সকাল ১০:০০টায় রাজধানী ঢাকার রমনায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশে আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি। এছাড়া অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক জনাব ওয়াহিদা বানু, বাংলাদেশের ওমেন হেলথ কোয়ালিশনের জনাব শরীফ মোস্তফা হেলালসহ জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় বেলুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। আলোচনা সভা শেষে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে দুইজন কৃর্তী নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন: দৈনিক ইত্তেফাক এবং পাক্ষিক অনন্যা ম্যাগজিন এর স¤পাদক জনাব তাসমিমা হোসেন এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ের লড়াকু সৈনিক জনাব সাবরিনা সুলতানা।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা যদি সমতা ও মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, তাহলে সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন অল্প কিছু মেয়ে আমাদের সাথে পড়ত। বর্তমানে নারীরা অনেক অগ্রসর হয়েছে, কিন্তু আরও অনেক দূর যেতে হবে। একটা ক্ষেত্রে নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছেÑসেটি হলো রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে। যে পদ্ধতিতে নারীদের সংসদ ও স্থানীয় সরকারে স্থান দেওয়া হয়, সে পদ্ধতিটি সঠিক নয়। এর ফলে নারীদের রাজনৈতিক বিকাশ ঘটে না। এ পদ্ধতি বদলানো দরকার, তাহলেই সত্যিকার অর্থে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে। নারীরা যদি রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নে ভ‚মিকা রাখতে পারে, তাহলে নারীদের পরিপূর্ণ অগ্রগতি হবে।
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, আমরা নারীরা কি আদৌ সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিতি হতে পেরেছি, সমঅধিকার পেয়েছি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ পেয়েছিÑএ সব প্রশ্ন আজ নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমার মনকে নাড়া দিচ্ছে। অনেক সময় পেরিয়েছে। তারপরও নারীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীর প্রতি সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সাইবার বুলিং। ডিজিটাল যুগে সবকিছু যেমন ডিজিটাল হচ্ছে, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতনও ডিজিটাল রূপ ধারণ করেছে। সাইবার জগতে নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। নারীরা অনেক পথ এগিয়েছে। আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। শুধু যথাযথ স্বীকৃতির অভাবে যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। নারীদের আরও আÍনির্ভরশীল হতে হবে। নায্য সমাজ গঠনের জন্য সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
তাসমিমা হোসেন বলেন, নারী উন্নয়ন নিশ্চিত করা, নারীর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জেন্ডার বৈষম্য হ্রাসে তাাঁর অবিরত কার্যক্রম উপস্থাপন করে নারীদের উদ্দশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে। তিনি অনন্যা সম্মাননা পুরস্কার বিষয়ে বলেন-সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাক্ষিক অনন্যা থেকে আমরা যখন প্রথমবারের মতো ১০ জন নারীদের সম্মাননা দেওয়া শুরু করি, তখন অনেকে আমাকে বলেছে প্রতিবছর এতো নারী পাওয়া যাবে না। কিন্তু নারীরা এখন সম্মাননা দেওয়ার মতো অনেক চমৎকার কাজ করছে যে পুরস্কার দিতে গিয়ে আমাদের অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয়।
সাবরিনা সুলতানা বলেন, সমাজে নারীরা বঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীরা আরও বেশি বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। সমাজে তাদের কোন শখ থাকতে পারবে না, নিজের ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটাতে পারবে না। এমনকি সমাজে বিয়ে কিংবা সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকারটুকুও নেই। তাই সবাইকে প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
————————————————————
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ: