
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে আন-র্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০১৯ উদযাপন
‘কন্যাশিশুর অগ্রযাত্রা, দেশের জন্য নতুন মাত্রা’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে উদযাপিত হলো আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস-২০১৯। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯ টায় জাতীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পর্যন্ত এক র্যালি এবং র্যালি শেষে সকাল ১০:০০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি’ত ছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি- মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপসি’ত ছিলেন জনাব কামর”ন নাহার- সচিব,মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জনাব লাকী ইনাম- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপসি’ত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব বদর”ন্নে”ছা এবং শাহীন আক্তার ডলি- সহসভাপতি, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম। শুভে”ছা বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক জনাব জ্যোতি লাল কুরী।
্ল্ল্ল
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম ফজিলাতুন নেসা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করেন। তার ১৫ বছর পর ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করে যা ৯০ সালে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করে। আমাদের সরকার শিশু বান্ধব সরকার, কন্যাবান্ধব সরকার। আমাদের সরকার ২০১৩ সালে শিশু আইন এবং ২০১১ সালে জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করে। এমনকি একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রথম বাংলাদেশ শিশু বাজেট প্রণয়ন করেছে।
কন্যাশিশুর জীবন ভাল থাকলে দেশ ভাল থাকে। দারির্দ্য বিমোচনের কার্যকর পদক্ষেপ হলো কন্যাশিশুর জন্য বিনিয়োগ। সরকার কন্যাশিশুর অগ্রযাত্রার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নি”েছ। কন্যাশিশুর অগ্রযাত্রায় বাল্যবিবাহ একটি প্রধান বাধা। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের মাধ্যমে কন্যাশিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করি। কন্যাশিশুর সুরক্ষা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
জনাব কামর”ন নাহার বলেন, কন্যাশিশুদের জন্য আলাদা একটি দিবস রাখার উদ্দেশ্য হলো পরিবার থেকে বৈষম্য নিরসন করা। কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্যের প্রধান কারণগুলি হলো দারির্দ্য, বাল্যবিয়ে এবং সমাজের অসচেতনতা। এসব কারণ দূর করার জন্য সরকার কাজ করে যা”েছ। আমি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা নিজেদের কন্যাকে ভাল কাজে হ্যাঁ বলতে শিখান এবং খারাপ কাজে-যেসব কাজে তাদের ক্ষতি হয় সেটাকে না বলতে শিখার সাহস দেন।
লাকী ইনাম বলেন, পল্লিকবী জসীম উদদীনের ‘আসমানী’ কবিতার আসমানী স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল কিনা আমরা জানি না। কত আসমানী অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, যৌতুকের শিকার হয়েছে সেটা আমরা অনুমান করতে পারি। কিন’ আজকে আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। মেয়েরা সমাজের সর্বক্ষেত্রে আজ এগিয়ে যা”েছ। সরকার মেয়েদের অগ্রযাত্রায় নানা পদক্ষেপ নি”েছন। এসব পদক্ষেপের ফলে আমাদের মেয়েরা আরও এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
শাহীন আক্তার ডলি বলেন, ‘কন্যাশিশুর অগ্রযাত্রা, দেশের জন্য নতুন মাত্রা’-আজকের স্লোগানেই বুঝা যা”েছ যে অগ্রযাত্রা হ”েছ নতুন মাত্রা নিয়ে আসছে। মেয়েদের অগ্রযাত্রায় প্রমাণ করে যসুযোগ পেলে মেয়েরা দক্ষ হতে পারে। নারীরা হ”েছন দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। নারীরা যেমন দেশের মানবসমপদ কন্যারাও তেমনি মানবসমপদ। তাই কন্যাশিশুদের উন্নতিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। বাল্যবিবাহ কন্যাশিশুদের অগ্রযাত্রায় একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
জ্যোতি লাল কুরী বলেন, মেয়েদের সমপর্কে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে কন্যাশিশুদের জন্য আলাদা করে কোনো দিবস করার প্রয়োজন হবে না।
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, আজ থেকে শত বর্ষ আগে নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য শিক্ষার আলোক বর্তিকা হাতে নিয়ে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত বলেছিলেন-কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্য্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, ওরা নিজেরাই নিজেদের অন্ন-বস্ত্র উপার্জন করিবে। উনি কন্যাশিশুদের নিয়ে আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন বাস-বায়নের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কন্যাশিশুর অগ্রগতির জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যা”েছন। আজকের দিনটি আন-র্জাতিক কন্যাশিশু দিবস হিসাবে ঘোষিত হয়ার পিছনে বাংলাদেশের অবদান অনেক বেশি। ২০০০ সাল থেকে ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় কন্যাশিশু দিবসের সূচনা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আন-র্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ঘোষিত হয়। এতসব অগ্রগতি সত্ত্বেও কনয়াশিশুদেরলে বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার নেতিবাচক চিত্রও আমরা দেখেতে পাই। সবাই আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এ চিত্র আমরা বদলাবো, বদলে দেওয়াই আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার।
আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বাংলদেশ শিশু একাডেমির সাদিয়া এবং দীপান্বিতা।