২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শাস্তির ভয়ে কাজীরা বাল্যবিয়ে পড়ায় না, সেখানে বিয়ে পড়ায় নোটারী পাবলিক যেটি প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরী। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবকদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতাকে বিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। যেটি মোটেই সমর্থন যোগ্য নয়। তবে ছেলে ও মেয়ের সম্পর্কের মাধ্যমে কোন মেয়ে গর্ভবতী হলে তাদের বিয়ের ব্যাপারটি ভিন্ন বিবেচনায় দেখা যেতে পারে। ধর্ষণের সালিশি সমাধান মোটেই বৈধ নয়। এটি একটি ক্রিমিনাল ওফেন্স। বিচারকরা যদি মনে করেন তাহলে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের নিচের কন্যাশিশুকে বাবা মার সম্মতিতে বিয়ে দেয়া যেতে পারে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি যথপোযুক্ত। তবে করোনাকালে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে প্রশাসন ব্যস্ত থাকায় আইনটির যথাযথ প্রয়োগ হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা কমে আসবে। কিন্ত কমেনি। যে কারনে এ সময়ে বাল্য বিবাহ বেড়েছে। ‘করোনায় বাল্য বিবাহ বৃদ্ধির কারণ’ নিয়ে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ আয়োজনে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় আজ ০৯ অক্টোবর, শনিবার এফডিসিতে এই ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড গমেজ ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।

  • বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি যথোপোযুক্ত
  • ধর্ষকের সাথে বিয়ে মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়
  • ধর্ষণের সালিশি সমাধান বৈধ নয়
    – জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, এনডিসি

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাল্যবিবাহ শুধু বন্ধ করলেই হবে না, বাল্যবিবাহ ঠেকানো মেয়েটি পরবর্তীতে কেমন আছে ? বিয়েটি কেন হচ্ছিলো ? মেয়েটির অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা কেমন ? সে কি তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে ? অন্যদিকে যে মেয়েটির বাল্য বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সেই মেয়েটি কেমন আছে ? তার শারিরিক মানসিক স্বাস্থের অবস্থা কি রকম। এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বাল্যবিবাহের শিকার সেই মেয়েগুলোর সুরক্ষায় কাজ করতে হবে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী গত বছর গড়ে মাসে ৫৮ টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের ৩১ শতাংশই গর্ভবতী হন। যারা শারিরিক ও মানসিক ভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত নয়। ৪৩ শতাংশ কিশোরী মা গর্ভজনিত সমস্যার কারণে মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৯ শতাংশ। বাল্যবিবাহ নির্মূলে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল, কোভিড-১৯ এর অতিমারিতে নানাবিধ কারণে তা আবার পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন করোনাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তেমন নজরদারি করতে পারেনি। তাই করোনাকালে বাল্য বিবাহ বেড়েছে। দারিদ্রতার কারনে অনেক কিশেরীরাই বাল্যবিবাহের শিকার হয়। তাই মেয়েদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি যদি আমরা কারিগরি শিক্ষা দিতে পারা যায়, তাহলে তারা নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু আয় করতে পারবে। তখন হয়তো বাল্যবিবাহ অনেকাংশে কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আগের আইনে ১৮ বছরের নীচে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল৷ নতুন ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’-এ ১৮ বছরের নীচে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হলেও, ঐ একই আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতিতে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সম্মতিতে ১৮ বছর বয়সের নীচেও বিয়ের অনুমতি দেওয়া যাবে। তাহলে কি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বাল্যবিয়ের সংস্কৃতি আমাদের দেশে চলতেই থাকবে বলে প্রশ্ন করেন জনাব কিরণ।

প্রতিযোগিতায় ওয়াইডবিøউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালকে পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, চাইল্ড এন্ড ইয়ুথ ফোরাম এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. মেহরুবা, সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন, ড. শাকিলা জেসমিন ও মোর্শেদা ইয়াসমিন পিউ।

ক্যাপশন ০১: করোনায় বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে ছায়া সংসদের অতিথি নাসিমা বেগম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সহ অন্যান্যদের সাথে বিজয়ী দলের বিতার্কিকদের ট্রফি হাতে দেখা যাচ্ছে।
ক্যাপশন ০২: করোনায় বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে ছায়া সংসদের বিজয়ী দলের বিতার্কিকদের ট্রফি প্রদান করছেন অনুষ্ঠানের অতিথি নাসিমা বেগম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *