২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

টয়লেটে মিলল সেই শিশুটির লাশ

main_logo-Samokal
সমকাল প্রতিবেদক
রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে ট্রপিকানা টাওয়ারের টয়লেট থেকে ঋতু আক্তার নামে ৯ বছর বয়সী এক শিশুর গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের ৫ দিন পর গতকাল শনিবার দুপুরে ভবনটির চতুর্থ তলার একটি টয়লেট থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। সোমবার থেকে শিশুটি নিখোঁজ হলে তার মা থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। এ নিয়ে গতকাল সমকালে ‘চার দিনেও শিশু ঋতুর খোঁজ মেলেনি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।ওই ভবনের চতুর্থ তলাজুড়ে কয়েকটি বেসরকারি ট্রাভেল ও হজ এজেন্সির অফিস রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো এজেন্সির কর্মচারী শিশুটিকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যার পর লাশটি টয়লেটে গুম করে। পুলিশ ওই ভবনের বিভিন্ন অফিসের ৩ জনকে আটক করেছে।


এদিকে শিশু হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন পুরানা পল্টন মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। তারা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। ব্যস্ততম সড়ক অবরোধের কারণে পুরানা পল্টন থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শিশুটি তার মা নুরজাহান, এক ভাই ও অপর দুই বোনের সঙ্গে তোপখানা রোডের ২৬/১ নম্বর টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকত। তার মা ট্রপিকানা ভবনের চারতলায় ট্রাভেল এজেন্সির কর্মচারীদের দুপুরে রান্না করা খাবার সরবরাহ করতেন। গত সোমবার বিকেলে খাবারের বক্স ফেরত আনতে গিয়ে শিশুটি হত্যার শিকার হয়।


ওই বাণিজ্যিক ভবনের চতুর্থ তলার লোকজন জানায়, গতকাল সকালে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ একটি টয়লেট থেকে পচা গন্ধ বেরোলে সন্দেহ হয়। থানায় খবর দেওয়া হলে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ টয়লেট থেকে চিৎ অবস্থায় পড়ে থাকা শিশু ঋতুর লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ট্রপিকানা টাওয়ার ও এর নিচে কয়েকশ’ লোক জড়ো হয়। খবর পেয়ে শিশুটির মা ও স্বজনরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাণিজ্যিক ভবনের টয়লেট থেকে শিশুর লাশ উদ্ধারের খবরে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের একটি দলও ঘটনাস্থলে যায়। সিআইডির (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) একটি দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।


চতুর্থ তলার হোয়াইট রোজ ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানান, চতুর্থ তলার চারটি টয়লেটই তালাবদ্ধ থাকত। এগুলো শুধু কর্মচারীরা ব্যবহার করত। সকালে অফিসে ঢুকে দুর্গন্ধ পেয়ে তিনি থানায় খবর দেন। ওই শিশুটি প্রতিদিন দুপুরে কয়েকজন কর্মচারীর জন্য খাবার নিয়ে আসত। আবার বিকেলে খাবারের খালি বক্সগুলো ফেরত নিত। ভবনের অপর একটি ট্রাভেল এজেন্সির এক কর্মকর্তা জানান, ওই শিশুটি প্রতিদিনই হোয়াইট রোজ ট্রাভেল এজেন্সির কর্মচারী মোস্তফা, এয়ার পিস ট্রাভেলসের সেলিম ও নাসের ট্রাভেলসের নজরুলের জন্য খাবার নিয়ে আসত।


শিশুটির মা নুরজাহান বেগম জানান, ওই ভবনের বিভিন্ন তলায় তিনি বক্সভর্তি ভাত বিক্রি করেন। চতুর্থ তলায় তিনটি হজ এজেন্সিতে ঋতু ভাতের বক্স পেঁৗছে দিত। গত সোমবার বিকেলে ঋতু বাসা থেকে ওই ভবনে খালি বক্স আনতে গিয়েছিল। এরপর আর বাসায় না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন। না পেয়ে মেয়ের সন্ধানে তোপখানা রোড ও সেগুনবাগিচা এলাকায় মাইকিং করেন। মঙ্গলবার তিনি মেয়ে নিখোঁজের কথা জানিয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
নুরজাহান আরও জানান, তার মেয়ে নিখোঁজের পর তিনি ট্রপিকানা টাওয়ারের চতুর্থ তলায় মেয়ের খোঁজ করেন। যারা তার কাছ থেকে ভাত কিনত সেই মোস্তফা, সেলিম ও নজরুল তাকে জানায়, ওইদিন ঋতু খালি বক্স নিতে যায়নি। গতকাল দুপুরে তিনি জানতে পারেন, সেখানেই তার মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। মায়ের অভিযোগ, ওই তিন পাষণ্ডই তার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করেছে।


শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবদুল জলিল জানান, ওই তিনজনকেই আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হত্যার ধরন সম্পর্কে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এটা নিশ্চিত। তবে পচন ধরায় বোঝা যায়নি কীভাবে তাকে হত্যা করা হলো। মেয়েটি পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল কি-না এবং হত্যার কারণ উদ্ঘাটনে তার লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তথ্যসূত্র: সমকাল, ২০ জানুয়ারি ২০১৩