২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

পত্রিকায় প্রকাশিত

প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘গার্ল সামিট’ বা কন্যাশিশু সম্মেলন। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য বাল্যবিবাহ ও শিশুদের জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ করা এবং বিভিন্ন দেশে মেয়েদের সুরক্ষার নামে ফিমেল জেনিটাল মিউটিল্যাশন (লিঙ্গ কর্তন) বন্ধ করা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লিঙ্গ কর্তনের বিষয়টি তেমন সমস্যা না হলেও বাল্যবিবাহ একটি চরম সমস্যা।

বাল্যবিবাহ পরিস্থিতিসহ দেশের কন্যাশিশুরা কেমন আছে, তা জানতে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার। ২০০২ সাল থেকে এ ফোরাম কাজ করছে। বর্তমানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকসহ ১৭২টি সংগঠন এ ফোরামের সঙ্গে যুক্ত।

প্রথম আলো: কেন এই ফোরাম বা মোর্চা গঠন?

নাছিমা আক্তার: ২০০০ সালের আগে সার্ক কন্যাশিশু বর্ষ, কন্যাশিশু দশকসহ বিভিন্ন ধাপ পার করেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কন্যাশিশুর সুরক্ষায় সরকার বিভিন্ন অঙ্গীকারও করেছে। তবে সেসবের বাস্তবায়ন ছিল হতাশাজনক। ২০০০ সালে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারকে কন্যাশিশু দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে ফোরামের যাত্রা। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট সচিবালয় হিসেবে কাজ করছে। ফোরামের কর্মীদেরও সহায়তা করছে এ সচিবালয়। এ ছাড়া এ ফোরাম আন্তর্জাতিক মোর্চা ‘গার্লস নট ব্রাইড’র সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

প্রথম আলো: ফোরামের ফলে দেশের কন্যাশিশুদের অবস্থার কী পরিবর্তন হয়েছে?

নাছিমা আক্তার: ফোরামের উদ্যোগে সরকার ৩০ সেপ্টেম্বরকে কন্যাশিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে দিবসটি ঘোষণা দেওয়া হলেও বিশ্ব শিশু সপ্তাহের মধ্যে দিবসটিকে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ দিবস পালনের জন্য সরকারের বাজেটও থাকে না। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের ধারণা নিয়ে প্রথম ফোরামের কাজ শুরু করে। তবে বর্তমানে ইউনিসেফের সহায়তায় সরকার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে তার পরও বলতে হয়, কন্যাশিশুদের সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

প্রথম আলো : শিক্ষা ক্ষেত্রে কন্যাশিশুর অংশগ্রহণ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে আইন বা নীতির মধ্যেই কন্যাশিশুরা আবদ্ধ বললে কি খুব ভুল বলা হবে?

নাছিমা আক্তার: জাতীয় শিশুনীতি বা নারীনীতির কথাগুলো কাগজে-কলমেই আবদ্ধ হয়ে আছে। এগুলো বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগ নেয়নি। সরকার পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আইন করেছে, তবে আইনটি সম্পর্কে প্রচারের ব্যবস্থা না নেওয়ায় তা অনেকেই জানে না। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার শিশু-কিশোরীরা অভিযোগ জানায়। অনেক সময় আমি নিজেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। কেননা তাদের সহায়তার জন্য আসলেই কোথায় বা কার কাছে যাওয়া প্রয়োজন, তা বুঝতে পারি না। যৌন হয়রানি বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমিটি গঠন করেনি। তাই শুধু আইন বা নীতি করে ফেলে রাখলেই হবে না, তা সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না, তা সরকারকে দেখতে হবে।

প্রথম আলো : বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলেন।

নাছিমা আক্তার: বাল্যবিবাহ দেশের জন্য ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাল্যবিবাহের হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। তবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। প্রায় সাত-আট মাস ধরে সরকার ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েক দফায় বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুপারিশ জমা দেওয়া হলেও আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার বাল্যবিবাহ বন্ধে নিরুত্সাহিত হন। তাঁরা বিষয়টিকে মানবিকভাবে দেখে উল্টো সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া এ ধরনের বিয়ে বন্ধ করলে ভবিষ্যতে ভোট ব্যাংক কমে যাবে বলেও মনে করেন তাঁরা। এ ছাড়া কাজিদের জবাবদিহি কারও কাছে সুস্পষ্ট নয়।

প্রথম আলো: গৃহশ্রমিক হিসেবে আদুরিদের নির্যাতন কমেনি। এ ক্ষেত্রে সরকার আসলে কতটা আন্তরিক?

নাছিমা আক্তার: পরিবারে আর্থিক অনটন দেখা দিলে প্রথমেই বাড়ির মেয়েটিকে অন্যের বাড়িতে কাজে পাঠিয়ে দেন অভিভাবকেরা। গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় একটি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে পারছে না সরকার।

প্রথম আলো: পথশিশু ও দরিদ্র শিশুদের মধ্যে কন্যাশিশুরা সব থেকে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

নাছিমা আক্তার: রাজধানীর ফার্মগেটে এক বিকলাঙ্গ কন্যাশিশু দিনের বেলায় ভিক্ষা করে। রাতে তার অভিভাবকদের সহায়তায় তাকে বিভিন্ন সিনেমা হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সে বাধ্য হয় অন্যদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে অনেক মেয়ে শিশু পানি বিক্রি করে। রাতের বেলা তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এটি যে নির্যাতন, তা-ও অনেক শিশু বুঝতে পারে না।

বেসরকারি সংগঠন উন্নয়ন অন্বেষণের ২০১২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পথশিশুদের ১৯ শতাংশই যৌনকর্ম করতে বাধ্য হয়। এই শিশুদের সুরক্ষায় সরকারের কী ব্যবস্থা আছে, তা দৃশ্যমান নয়। পথশিশুদের মধ্যে কন্যাশিশুরা মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়ছে।

কন্যাশিশু সম্মেলনে সরকার বিভিন্ন অঙ্গীকার করবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেবে। দেশে ফেরার পর সেসব অঙ্গীকার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

প্রথম আলো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

নাছিমা আক্তার: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/274576/%E2%80%98%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%A6%E0%A7%83%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A7%9F%E2%80%99