
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২১ পালন
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে উদযাপিত হয় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২১। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ১০:৩০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো: সায়েদুল ইসলাম, সচিব মহোদয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; জনাব রাম চন্দ্র দাস, মহাপরিচালক (গ্রেড-১), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; জনাব লাকী ইনাম, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ঢাকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব রাবেয়া বেগম, সহ সম্পাদক, স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব নাছিমা আক্তার জলি, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
সায়েদুল ইসলাম বলেন, কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষায় সমাজকে সচেতন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। যখন প্রযুক্তিই নির্ধারণ করবে যে কোন দেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে, সেসেময়ে আমাদের কন্যাশিশুদেরকে অবশ্যই প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে হবে, তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের হাত ধরেই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বার্থক রূপায়ণ হবে। ডিজিটাল প্র“যুক্তিতে যে দেশ যত বেশি সমৃদ্ধ সে দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারী ও কন্যাশিশুদের প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি কন্যাশিশুকে উদাহরণ হতে হবে, প্রত্যেকটি কন্যাশিশুকে বিশ্বাস করতে হবে যে সেও সমান যোগ্য। তাকে যদি কেউ সুযোগ না দেয়, নিজের জায়গায় সচেতন হতে হবে। নিজেকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে বড় হবার। দ্বিতীয়ত সচেতন হতে হবে মা-বাবাদের, ছেলে ও মেয়ে সন্তানের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, আজীবন তাঁর রাজনীতি এটাই ছিল। তিনি শিশুদের অধিকার রক্ষায় শিশু আইন করেছেন জাতিসংঘ সনদ হওয়ার পনের বছর আগেই।
লাকী ইনাম বলেন, কন্যাশিশুর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে হয় সমাজ পরিবার ও রাষ্ট্রকে। এই লক্ষ্যে আমাদের সরকার অনেক কাজ করে যাচ্ছে। শিশু সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের মেধা ও মনন বিকাশে সরকারি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদশ শিশু একাডেমি নিরলস ভ‚মিকা পালন করে চলেছে। কন্যাশিশু দিবসে অভিভাবক ও সচেতন মহলের সনুরোধ থাকবে বিষয়টি যেন একটি সপ্তাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, আমাদের সারা বছরের কর্মকাণ্ডে আমরা যেন শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতন থাকি। বিশেষ করে কন্যাশিশুদের অধিকার বিষয়ে আমরা যেন সর্বদা সচেতন থাকি।
রাম চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের যে সন্তানরা নিজেদেরকে প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে পারবে, তারা পৃথিবী শাসন করতে পারবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন এর পর আমরা শিশু সনদ পেয়েছি। ঐতিহ্যগতভাবে আগে ভাবা হোত মেয়েদেরকে যত দ্রুত বিয়ে দেয়া যায় তত পরিবার দায়মুক্ত হয়। কন্যার সাথে দায় শব্দটি কন্যাদায়। আজকের বাংলাদেশে কন্যাদায় শব্দটি একেবারেই বেমানান। কন্যাদারকে আজকে যে অগ্রযাত্রায় আমরা দেখতে পাই তাতে আমাদের বিশ্বাস যে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে কন্যাকে শুধুমাত্র মেয়ে হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখবে। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারী ও পুরুষ সমান তালে চলছে। তবুও কিছু পশ্চাতপদতা যে নেই তা নয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার।
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন। সেই সময়ে পৃথিবীর অনেক দেশেই শিশুদের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। আমরা প্রতিবছর জাক জমকের সঙ্গে কন্যাশিশু দিবস উদযাপন করি। এই দিবস উদযাপন করার মধ্য দিয়ে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে কন্যাশিশুদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে, তাদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে; যাতে করে আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, কন্যাশিশূদের জন্য একটি সুরক্ষিত বাংলাদেশ, একটি সমতার বাংলাদেশ গড়তে পারি। চলার পথে কন্যাশিশুদের অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু পিছিয়ে গেলে হবে না, তাদেরকে সেই বাধা উতরে যেতে হবে। আমরা যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেই সোনার বাংলাদেশ তখনই গড়া সম্ভব, যখন আমরা বাধাগুলিকে উতরাতে পারব।