২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

রিমির শোক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র ক্ষোভ

19-11-12
kalerkantho-logo.gif
বখাটে শামীমের ফাঁসি দাবি
দিলীপ কুমার মণ্ডল ও আসাদুজ্জামান নুর, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ থেকে

কলেজছাত্রী ফারহানা ইসলাম রিমির আত্মহত্যার ঘটনায় শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে সোনারগাঁ। মর্মান্তিক এ ঘটনা এলাকার মানুষকে তীব্রভাবে আলোড়িত করেছে। গতকাল সবাই ছুটে যায় রিমিদের বাড়িতে, তার পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানাতে। শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে এমপি, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাসহ নানা স্তরের মানুষ ছুটে যান সোনারগাঁয়।দিনভর লোকে-লোকারণ্য ছিল রিমির পিরোজপুর ইউনিয়নের চর গোয়ালদি গ্রাম। আবালবৃদ্ধবনিতা_সবাই রিমির আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী বখাটে শামীমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সকাল থেকেই শামীমের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন রিমির সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজের সহপাঠী ও শিক্ষকরা। ফারহানা ইসলাম রিমি ছিল ওই কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী শামীমের শাস্তি দাবি করে গতকাল মানববন্ধন করে কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকাবাসী। দুপুরে মোগড়াপাড়া এলাকায় কলেজের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন শেষে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কাছে দোষীদের বিচারের দাবিসংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করে।
উল্লেখ্য, দিনের পর দিন শামীমসহ কয়েকজন স্থানীয় বখাটের হয়রানির শিকার রিমি চরম অপমান, ক্ষোভ, দুঃখ ও হতাশায় গত শনিবার দুপুরে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। এর আগে রিমি একটি চিরকুটে লিখে যায়, তার মৃত্যুর জন্য শামীম দায়ী। সে চর গোয়ালদি গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে।


এদিকে বখাটেপনার শিকার হয়ে একজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করার খবর শুনে গতকাল বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সোনারগাঁর মেঘনা পাড়ের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল চর গোয়ালদি গ্রামে যান। তিনি রিমিদের বাড়িতে পেঁৗছামাত্র কান্নার রোল পড়ে যায়। রিমির মা-বাবা, বোনসহ স্বজনরা মন্ত্রীকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। মন্ত্রী নিজেও এ সময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মন্ত্রীর কাছে পুরো ঘটনাটি তুলে ধরেন রিমির মাসহ অন্যরা। এ সময় সেখানে উপস্থিত সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। উপস্থিত এলাকার মানুষ মন্ত্রীর সামনে বখাটে শামীমের ফাঁসির জানিয়ে স্লোগান দেয়।


শিক্ষামন্ত্রী রিমির পরিবারের সদস্যদের বলেন, ‘এই মৃত্যুর সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি।’ এটাকে আত্মহত্যা না বলে খুন হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই এখানে ছুটে এসেছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে অবহিত আছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বখাটেপনার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত সারা দেশে ১৪ জন মা-বোন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এ বিষয়ে সামাজিকভাবেও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা অভিভাবক তারা যেন বখাটে শামীমের মতো সন্তানদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেই।’ পরে শিক্ষামন্ত্রী সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে গিয়ে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে বক্তব্য দেন। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতারা।


রিমির চাচাতো ভাই আবু সাঈদ কালের কণ্ঠকে জানান, নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রিমির মরদেহ গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সূত্রপাত হয়। রিমিকে শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে যায় সহপাঠী থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষ। বাড়ির পাশের মাঠে জানাজা শেষে রাতে তাহেরপুর কবরস্থানে রিমির লাশ দাফন করা হয়।


সোনারগাঁ থানার ওসি হারুন অর রশীদ জানান, রিমির মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার রাতেই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিমির খালাতো ভাই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বখাটে শামীম ও তার বড় ভাই শাহজালালকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

তথ্যসূত্র: কালেরকণ্ঠ, ১৯ নভেম্বর ২০১২