বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই হলো ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। আর এর ৪৮ শতাংশই হলো কন্যাশিশু। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এদের অধিকাংশই জন্ম থেকে নানা বঞ্চনা ও বৈষম্যকে সঙ্গী করেই বেড়ে উঠছে। এতে তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ যেমন রূদ্ধ হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য, শিক্ষায়, দক্ষতায়, আত্মবিশ্বাসে ও সক্ষমতায় তারা পিছিয়ে পড়ছে সমবয়সী ছেলেদের তুলনায়। এছাড়াও কন্যাশিশুরা ব্যাপকভাবে যৌন সহিংসতার শিকার।
এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য প্রয়োজন কন্যাশিশুর প্রতি প্রচলিত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো। উপলব্ধিতে আনা যে, কন্যাশিশুরা শুধু ভবিষ্যত মা-ই নয়, তারা জাতির সম্পদ। তাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেচেঁ থাকা, তাদের বিকাশ ও সুরক্ষা এবং তাদের সমঅংশগ্রহণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করছে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি। তাই তাদের প্রতি বিনিয়োগই অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।
এই বিশ্বাসবোধ থেকে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষা ও তাদের বিকাশের বিষয়টিকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে কন্যাশিশু দিবস পালনের প্রস্তাব করে। এ প্রস্তাবের সাথে আরও ৫৪টি বেসরকারি সংস্থা, কিছূ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যারা কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষায় কাজ করছিলেন তারাও পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জুন ৪, ২০০০ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মস্ত্রণালয়ে শিশু অধিকার সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনটিকে কন্যাশিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা প্রদানের জন্য লিখিত প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার ৩০ শে সেপ্টেম্বরকে ‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার ফলে ২০০০ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সারাদেশে উদযাপিত হয়ে আসছে। ফলে বাড়ছে কন্যাশিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক সচেতনতা। এই চেতনাকে আরো তৃণমূলে নিয়ে যাওয়া ও দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেয়ার লক্ষ্যে সংগঠকরা ২০০২ সালে ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ গড়ে তোলে।