২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

প্রেস কনফারেন্স

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম কর্তৃক কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে ২০২১ সালের প্রথম ৮ মাসের (জানুয়ারি-আগস্ট) কন্যাশিশুদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তার একটি প্রতিবেদন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সকাল ১১.০০টায় (আব্দুস সালাম হল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জনাব ফারজানা খান, ডিরেক্টর অফ প্রোগ্রাম, এডুকো বাংলাদেশ এবং জনাব মনিকা বিশ্বাস, চাইল্ড ¯পন্সরশীপ ম্যানেজার, একশনএইড বাংলাদেশ।

নাছিমা আক্তার জলি বলেন, জানুয়ারি-আগষ্ট পর্যন্ত ২৪টি দৈনিক পত্রিকা (জাতীয়, স্থানীয় এবং দুটি অনলাইন) থেকে কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের চিত্র সংগ্রহ করেছে। তেরোটি (১৩) ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব ক্যাটাগরিতে এসব তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২১ – মূল প্রবন্ধ ডাউনলোড

তিনি প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত ৮ মাসে মোট ১১২ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এদের মধ্যে ০৪ জন বিশেষ শিশুও রয়েছে। এসিড আক্রমণের শিকার হয়েছে ০৯ জন কন্যাশিশু। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৪০ জন কন্যাশিশু। ১৩৬টি ইউনিয়নে জরিপ চালিয়ে ফোরাম প্রাপ্ত আগষ্ট ২০২০ সাল থেকে আগষ্ট ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১২৫৩টি বাল্য বিয়ের তথ্য পেয়েছে। গত ৮ মাসে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১ জন কন্যাশিশু, এর মধ্যে যৌতুক প্রদান করতে না পারায় ৯ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। গত ৮ মাসে মোট ৮১৩ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ১২৭ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৫২৩ জন, গণধর্ষণের শিকার হয় ১১০ জন কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু রয়েছে ৭৯ জন। প্রেমের অভিনয়ের ফাঁদে ফেলে ৪৭ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মোট ২৬টি। তথ্য মোতাবেক গত ৮ মাসে ১৫৩ জন কন্যাশিশু আত্ম হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর পেছনে মূলত যে কারণগুণি কাজ করেছে তা হলো, স্কুল বন্ধ থাকায় একধরনের হতাশা, পারিবারিকভাবে মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং শারিরীকভাবে যৌন নির্যাতন যা প্রকাশ করার মতো কোনো অভয় আশ্রয়স্থল নেই। গত ৮ মাসে ১৯৩ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশুর পরিস্থিতি এখনো নাজুক। কন্যাশিশুদের বিভিন্নভাবে যে অবস্থান থাকার কথা, যে অধিকার তাদের পাওয়ার কথা, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। করোনাকালে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, বাল্যবিবাহ ও যৌন নির্যাতন দ্বিগুণ হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

ফারজানা খান বলেন, ছোটবেলায় আমরা নিজেদের মতো করে ঘুরে বেড়াতাম, সুরক্ষিতবোধ করতাম। কিন্তু বর্তমানে কেন জানি আমরা আমাদের কন্যাশিশুদের নিশ্চিন্তবোধ করি না। আমি শুধু বলব ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা যেন আরো বেশি সচেতন ও সাবধান হই এবং অন্যকে সচেতন করি।
মনিকা বিশ্বাস বলেন, কন্যাশিশুরা পিছিয়ে থাকলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। আমরা যখন এখানে বসে কন্যাশিশুদের অধিকারের কথা বলছি, ঠিক সেই মুহূর্তেও অনেক কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আমরা যদি কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে আজকের অনুষ্ঠানে উলি­খিত সুপারিশগুলো প্রত্যেকটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।