২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ উদযাপন

‘নারীর সম-অধিকার, সম-সুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪। এই উপলক্ষে আজ ১০ মার্চ ২০২৪, এক র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির শুরুতে সকাল ৯.০০টায় রাজধানী ঢাকার রমনা পার্কের অস্তাচল গেটের সামনে বেলুন উড়িয়ে র‌্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার। র‌্যালির পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ-এ আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, গুডনেইবারস বাংলাদেশ-এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার দাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর স¤পাদক নাছিমা আক্তার জলি।

অনুষ্ঠানে দু’জন নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাগরিকা দাস এবং প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক সাবিনা ইয়াসমিন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে মনোযোগ দিয়ে ও আন্তরিকতা নিয়ে লেখাপড়া করতে হবে, উচ্চশিক্ষিত হতে হবে। বাল্যবিবাহ থেকে দূরে থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। কিন্তু তারা এখনও বিভিন্নভাবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়। এর অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। আমরা মনে করি, নারীরা শিক্ষিত হলে, পরিবার, সন্তান ও জাতি শিক্ষিত হবে। নারী স্বাস্থ্যবান হলে, সন্তান স্বাস্থ্যবান হবে, পুরো জাতি স্বাস্থ্যবান হবে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে তা পরিবার ও সন্তানের কল্যাণেই ব্যয় হয়। তাই জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থেই নারীর অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে হবে, তাদের প্রতি সকল প্রকার বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে, নারীকে শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবান ও স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।’

স্বাগত বক্তব্যে নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘নারীর সম-সুযোগের দাবিতেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল। ১৬৭ বছর আগে এই দিবসের সূচনা হলেও আজকেও নারীরা পরিপূর্ণ সম-সুযোগ, সম-অধিকার পায়নি। যদিও নারীরা যথেষ্ট পথ এগিয়েছে। কিন্তু তাদের পাড়ি দিতে হবে আরও অনেক দূর পথ।’

তিনি বলেন, ‘গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র নারীর প্রতি বৈষম্য বজায় রয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় আইন-নীতির মধ্যেই রয়েছে নারীর প্রতি বৈষম্য। কিন্তু যুক্তি সহকারে নারীরা যদি তাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়, তাহলেই তারা তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে। নারীরা যদি অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ না করতে পারে, তাহলে তারা কখনই তাদের পরিপূর্ণ অধিকার পাবে না।’ এজন্য কন্যাশিশু ও নারীদেরকে শিক্ষিত ও তাদের অধিকার সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওয়াহিদা বানু বলেন, ‘আমরা যারা উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ করি, তারা মূলত সারাবছরই নারীর উন্নয়নে কাজ করি। কারণ আমরা মনে করি, নারীর উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন।’ অনুষ্ঠানে তিনি নারীদের নিয়ে লেখা তাঁর স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

আনন্দ কুমার দাস বলেন, ‘শুধু কথায় নয়, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় দরকার যথাযথ পদক্ষেপ। আমরা চাই, নারীর প্রতি বিনিয়োগ, নারীর যথাযথ ক্ষমতায়ন। এর মাধ্যমে নারীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র নারীরা সম-অধিকার পাবে।’ নারী দিবস পালনের মাধ্যমে নারীর অধিকার আদায়ে সবাই আরও সচেতন হবে এবং তাদের প্রতি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মাননা প্রাপ্তির পর নিজের অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে গিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল ছবি তোলা এবং মানুষের জন্য কিছু করা। আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখেই ‘প্রথম আলো’ আমাকে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতায় লেখাপড়ার কারণে প্রতিবেদন লেখারও সুযোগ পাই আমি। আমার সামনে অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু আমি থেকে থাকিনি। আমি চেয়েছি এটা প্রমাণ করতে যে, নারীরাও পারে। আমি চাই আমার কাজের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ হোক।’

রুম টু রিডের প্রতিনিধি ফাহমিদা হামিদ অ্যানী বলেন, ‘আমরা জীবনে অনেকেই অনেক কিছু হতে চাই। কিন্তু সবার আগে আমাদেরকে মানবিক মানুষ হতে হবে। কারণ মানবিক মানুষ হতে না পারলে আমাদের সামগ্রিক উন্নতি নিশ্চিত হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের আগামীর যোগ্য ও মানবিক কন্যাশিশুরাই গড়ে তুলবে আগামীর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত পোস্টার ও ‘নারীর কথা-১৯’ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং অনুষ্ঠানের শেষভাগে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *