২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

আর্থ-সামাজিক ও জনমিতি জরিপ ২০১১

logo-ittefaq
শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে বেড়েছে বাল্যবিয়ে
স্যানিটেশন ৬১.৬%, টিউবওয়েল ব্যবহার ৮৯.১%, সংবাদপত্র পাঠক ১৫.২৫%, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১.১১%, টেলিভিশন দর্শক ৪৪.৮০%
ইত্তেফাক রিপোর্ট
দেশে শিশু, নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ের হার। ২০০৪ সালে নারীদের বিয়ের গড় বয়স ১৯ দশমিক ৩ বছর থাকলেও ২০১১ সালে তা কমে সাড়ে ১৭ বছরে নেমে এসেছে। অন্যদিকে দেশে সংবাদপত্রের পাঠক ও টেলিভিশন দর্শক বাড়লেও আশংকাজনক হারে কমে গেছে রেডিও শ্রোতার সংখ্যা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আর্থ-সামাজিক ও জনমিতি জরিপ-২০১১ এর ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পঞ্চম আদম শুমারি প্রকল্পের আওতায় পৃথকভাবে এই জরিপ করা হয়। এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন গতকাল রবিবার পরিসংখ্যান ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বিবিএস। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবর রহমান ফকির এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নজিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিএস মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল। আদম শুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ এর প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার দে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৫ থেকে ২৫ অক্টোবর সময়কালে এ জরিপ পরিচালিত হয়। মোট ৬ হাজার ৭২০টি নমুনা এলাকায় ১ লাখ ৬৮ হাজার খানায় ৩৩৬০ জন গণনাকারী এ জরিপ কাজ করেন।

স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সাফল্য

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। জন্মহার ২০০৪ সালে হাজারে ২০.৮ থাকলেও ২০১১ সালে তা ১৭.৮৮ এ নেমে এসেছে। এর মধ্যে গ্রাম এলাকায় জন্মহার ১৭.৯১ ও শহর এলাকায় ১৭.৭৪। সরকারের জন্ম নিয়ন্ত্রণের সফল প্রয়োগের ফলে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আলোচ্য সময়ে শিশু মৃত্যুর হার ৪.৪ থেকে ২.৭, মাতৃ মৃত্যুর হার ৩.৪ থেকে ২.১৮ এ নেমে এসেছে। নবজাতক মৃত্যুর হারও ৫৪ থেকে ৩৭.৩ এ নেমে এসেছে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ (৮৯.১%) খাবার পানি হিসেবে টিউবওয়েল এবং ডিপ টিউবওয়েল এর পানি পান করেন; যা বিগত ২০০৪ সালে ছিলো ৫০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। দেশের ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ লোক স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করেন। ২০০৪ সালে ৩৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ লোক বিদ্যুত্ ব্যবহার করলেও ২০১১ সালে তা ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী ডা. মজিবর রহমান ফকির তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকারের সময়কালে স্বাস্থ্যখাতে নেয়া গৃহীত পদক্ষেপের কারণেই দেশের এ উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সরকারের সময়কালে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১৮ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

বেড়েছে শিক্ষার হার

জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের জনগণের শিক্ষার হার জাতীয় পর্যায়ে ৫৬.০৯ শতাংশ (পুরুষ ৫৮.৭৬% ও মহিলা ৫৩.৪৪%) এবং গ্রাম এলাকায় ৫২.৮২ শতাংশ (পুরুষ ৫৫.৪৪% মহিলা ৫০.২০) এবং শহর এলাকায় ৬৯.৫৮ শতাংশ (পুরুষ ৭২.৫৪% এবং মহিলা ৬৬.৬৮%) -যা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে দেশের কর্মক্ষম মোট মহিলা ৯ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৪ সালে ছিলো মাত্র ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে নারী-পুরুষের সমতার হারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে প্রতি ১শ’ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৬৮ জন।

রেডিও বিমুখ মানুষ !

জরিপের প্রাপ্ত ফলাফল হতে দেখা যায়, দেশে রেডিও শোনার হার কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। জাতীয় পর্যায়ে এ হার ২০.১৬ থেকে ৩.৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে সংবাদপত্র পড়ার হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২০০৪ সালে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী সংবাদপত্র পাঠ করলেও ২০১১ সালে এ হার ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গ্রাম এলাকায় এ হার ১২ দশমিক ৭৪ ও শহর এলাকায় ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের হার জাতীয় পর্যায়ে ১ দশমিক ১১ শতাংশ। যা গ্রাম এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৫ ও শহর এলাকায় ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০০৪ সালে ২০.১৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী টেলিভিশন দেখলেও ২০১১ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ৪৪.৮০ শতাংশে।

অবিবাহিতদের সংখ্যা বেড়েছে

জরিপ প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ২০০৪ সালে ২৪ দশমকি ২ বছর থাকলেও ২০১১ সালে তা ২৩ দশমিক ৯ বছরে নেমে এসেছে। একই সাথে বেড়েছে অবিবাহিতদের সংখ্যা। ২০০৪ সালে ৪১ দশমিক ৪৭ শতাংশ অবিবাহিত এবং ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বিবাহিত থাকলেও ২০১১ সালে অবিবাহিতদের সংখ্যা বেড়ে ৫২ দশমিক ৮৬ এবং বিবাহিতদের সংখ্যা হরাস পেয়ে ৪৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে।

তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক, ৩১ ডিসেম্বর ২০১২