২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

ngcaf_anti_terrosist_humanchainজঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও শান্তি–সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অসামপ্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম এবং নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে গত ১৬ জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০.৩০টা থেকে ১১.৩০টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ফোরাম সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজমুদার, ড. তোফায়েল আহমেদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জনাব জাকির হোসেন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম সাখাওয়াত হোসেন, জাসদ (রব) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, হুমায়ূন কবির হিরু, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি, জনাব শাহজাহান মন্টু, রঘুনাথ রাহা, ক্যামেলিয়া চৌধুরী, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সেলিম, জনাব মাহবুব আক্তার, মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন প্রমুখ।
এছাড়াও ফোরামের ১৯টি সদস্য সংগঠণসহ বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ যুব মৈত্রীসহ নাগরিক উদ্যোগ, ব্রতী, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার মানবন্ধনে যোগদান করে সংহতি প্রকাশ করে।
মানববন্ধনে নিম্নলিখিত দাবি পেশ করা হয়-
– অবিলম্বে জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমন কর; – জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলো; – জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অবিলম্বে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলো; – জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অবিলম্বে অসামপ্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; – উদার, সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী সমাজ গঠনে উদ্যোগী হওয়া; – ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ কর; – রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করাসহ গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখ; – অবিলম্বে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ কর এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।

মানববন্ধনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জঙ্গিবাদ কারো বন্ধু হতে পারে না, তা মানবতার শত্রু, এ নিয়ে রাজনীতি করলে তার পরিণতি ভাল হবে না।’ তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নিরসনে সরকারের জিরো টোলারেন্স নীতি কাজ করছে না। শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা যাবে না। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং জঙ্গিদের মতের বিপক্ষে সুচিন্তিত ও বিকল্প ন্যারেটিভ বা প্রস্তাবনা দাঁড় করাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, তাদের মত ঠিক নয়।’ জঙ্গিবাদের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা নিজেদের নির্যাতিত মনে করে। এছাড়া আমাদের বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন-সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, যা জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশেই নয়, উন্নত-অনুন্নত সব দেশেই জঙ্গিবাদের বিস-ার ঘটেছে। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের একার পক্ষে এর মোকাবিলা সম্ভব হবে না। এজন্য আজ প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও জনগণের একাত্মতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদের সবচেয়ে নৃশংস শিকার সাধারণ জনগণ। তাই সাধারণ জনগণকেই কাঁধে কাধঁ মিলিয়ে তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গিবাদও একধরনের প্রতিবাদ। তবে এটার পথ ভিন্ন, সশস্ত্র। এ অবস’ায় জঙ্গিবাদ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র ও সুশাসন, যে গণতন্ত্র হবে জবাবদিহিতামূলক।’

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা সমস্যার গভীরতা অনুধাবন করতে পারছি না। বরং এখানে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক আবরণ দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ সমস্যা আমাদের সমাজের, রাষ্ট্রের।’ তিনি বলেন, ‘মতবাদ সমস্যা না। মতবাদ যখন সশস্ত্র রূপ নেয়, তখনই এটা জঙ্গিবাদ রূপ নেয়। তাই শুধুমাত্র বলপ্রয়োগ করে এর সমাধান করা যাবে না। এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে সুস’ ছাত্র রাজনীতি ও সুস’ সাংস্কৃতিক চর্চা না থাকায় আমাদের তরুণেরা বিপথে চলে যাচ্ছে। তাই তরুণেরা যাতে বিপথে না যায় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা হলেও দেশীয় প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ধর্ম থাকবে, অপর ধর্মের প্রতি ভালবাসা থাকবে এবং উদারনৈতিকতা থাকবে- আমরা এ রকম একটি পরিবেশ চাই।’ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে জুমার খুতবা নির্ধারণ করে দেয়ার যৌক্তিকতা নেই বলেও মন-ব্য করেন তিনি।

জনাব নাছিমা আক্তার জলি, ‘অতীতের বিভিন্ন সংকটকালীন মুহূর্তে আমাদের যুব সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন’ বর্তমানে তরুণদের একটি অংশ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে তরুণদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখার। তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে? কারণ তাদের একজনও পথভ্রষ্ট হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সবার বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।’
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘গুলশানের আর্টিজান হোটেলে হামলার ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার, যাতে ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনা মোকাবিলায় তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘আজ সময় এসেছে, জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কার কী ভূমিকা রয়েছে তা নির্ধারণ করা দরকার।’

প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও একই দাবিতে জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম এবং সুজন-এর উদ্যোগে সারাদেশের ৫৫টি জেলা ও ৬১টি উপজেলায় মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।