২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম কর্তৃক কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০২১) প্রকাশ

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে ২০২১ সালের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) কন্যাশিশুদের সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৭ মার্চ ২০২২ সকাল ১১.০০টায় (আব্দুস সালাম হল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের স¤পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি। সংবাদ সম্মেলনে জনাব মো: মইনুদ্দিন মাঈনুল, কান্ট্রি ডিরেক্টর গুডনেইবারস বাংলাদেশ; জনাব নবনীতা চৌধুরী, পরিচালক, জিজেডি এন্ড পিভাউ, ব্র্যাক; জনাব গোলাম কিবরিয়া, হেড অব এডুকেশন, কোয়ালিটি এসুরেন্স এন্ড ক¤েপইন্স, এডুকো বাংলাদেশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নাছিমা আক্তার জলি প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় এবং অনলাইন দৈনিক পত্রিকা থেকে ০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৩টি ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব-ক্যাটাগরিতে এসব তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একইসাথে, বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত কিছু তথ্য আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে সরাসরি সংগ্রহ করেছি। ২০২১ সালে মোট ১১৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন বিশেষ শিশুও রয়েছে। ২০২০ সালেরর তথ্য মোতাবেক, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল ১০৪ জন কন্যাশিশু। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার প্রায় ১২ শতাংশ। এ সময়কালে এসিড আক্রমণের শিকার হয়েছে ১০ জন কন্যাশিশু। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ২০৬ জন কন্যাশিশু।

তিনি বলেন, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বাল্যবিবাহ সম্পর্কে দেশের আটটি বিভাগের ২৭টি জেলার ১৩৬টি ইউনিয়নে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, আগস্ট ২০২০ সাল থেকে নভেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২,৮৬৮ জন কন্যাশিশু। গড়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ২১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪.৫৮ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিল ২,৫০৩ জন কন্যাশিশু। ২০২১ যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৭ জন কন্যাশিশু, এর মধ্যে যৌতুক প্রদান করতে না পারায় ৯ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া সত্তে¡ও ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ২০২১ সালে মোট ১,১১৭ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৭২৩ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ১৫৫ জন কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ১০০ জন। ২০২০ সালে ধর্ষণের মোট সংখ্যা ছিল ৬২৬ জন এবং ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্যাশিশু ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭৪.৪৩ ভাগ। গৃহশ্রমিক নির্যাতনের মোট ৩৫টি ঘটনা জেনেছি। এরমধ্যে ১৮ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হযেছে, ৫ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০২১ সালে ২৪২ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ৬১ জন এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে মনোমালিন্যের কারণে ৫৬ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। গত ২০২১ সালে ২৭২ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যতম কারণগুলো ছিল: পারিবারিক সহিংসতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পূর্ব থেকে পারিবারিক শত্রুতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের প্রমাণ না রাখার কৌশল ইত্যাদি। ২০২১ সালে ৩৫ জন কন্যাশিশুকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এরকম অবক্ষয় দিন দিন বাড়ছে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণে যেমন এটি হচ্ছে আবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কারণে মানুষ অভিযোগও দিতে চায় না। অনেকগুলো কারণে কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতন বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সবাইকে সক্রিয় হওয়া দরকার।

নবনীতা চৌধুরী বলেন, কন্যাশিশুর প্রকৃত অবস্থা বিচারে এসব পরিসংখ্যান নতুন করে ভাবার জন্য আমাদের সাহায্য করবে। সংখ্যাগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। খুব কম ঘটনাই মিডিয়ায় আসতে পারে। জেন্ডার ভিত্ততিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে কি না সে পরিংখ্যান তুলে ধরার পরিসর তেমন নাই। সেদিক থেকে ফোরামের এই প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মইনুদ্দিন মাঈনুল বলেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করার, চেপে রাখার একটা চেষ্টা থাকে। এসব নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে কয়টা ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তা ভেবে দেখার বিষয়। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অপ্রকাশিত সংবাদগুলো বের করে আনার জন্য আমি সাংবাদিকদের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি।

গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা একদিকে যেমন এসডিজি গোলের দিকে ধাবিত হচ্ছি, বিপরতীভাবে কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। এখন কেন আমাদের সমাজে এরকম ঘটনা বাড়ছে তা নিইয়ে সরকার ও নয়াগরিকদের বিভিন্ন উদ্যোগকে নতুন করে ভাবতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *