২/২, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
৮৮০-২-৮৮০-২-৯১১

২৪ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি: বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ বছর বহাল রাখার দাবি

 

‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬’-তে মেয়েদের বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ বছর বহাল রাখার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। ২৬ নভেম্বর ২০১৬, জাতীয় গণমাধ্যমে তাঁরা এই বিবৃতি দেন। গণমাধ্যমে এই বিবৃতি প্রেরণ ও প্রকাশে জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম-এর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ আবুল মকসুদ, সেলিনা হোসেন, এম এ মুহিত, নাসিমুন আরা হক মিনু, রোকেয়া কবির, আয়েশা খানম, মাহফুজা খানম, রোকেয়া প্রাচী, নাজমা সিদ্দিকী ,সালমা খান, তানিয়া হক, জোবেরা রহমান লিনু, জাকিয়া হাসান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. আমেনা মহসীন, ড. শাহদীন মালিক, বজলুর রশীদ ফিরোজ, ড. আনু মোহাম্মদ, রুহিন হোসেন প্রিন্স, এম হাফিজউদ্দিন খান, সালমা আলী, রাশেদা কে চৌধুরী এবং ড. তোফায়েল আহমেদ।

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, মেয়েদের বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ বিধান’ রেখে গত ২৪ নভেম্বর ২০১৬ মন্ত্রিসভায় ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬’ পাশ হয়েছে। আমরা মনে করি, ১৮ বছরের কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার ‘বিশেষ বিধান’ রেখে আইনটি সংসদে পাশ করা হলে তা হবে টেকসই উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধক।

আমরা জানি, বাংলাদেশ সরকারের অনুসমর্থনকৃত জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। এমনকি বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ ও জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ তে-ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলা হয়েছে। তাই ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার ‘বিশেষ বিধান’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নীতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এবং শিশুদের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।

১৯২৯ সালের আইনে যেখানে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর রাখা হয়েছে, সেখানে ২০১৬ সালে এসে আইনে ‘বিশেষ বিধান’ রাখা হবে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী বর্তমান সরকারের একটি পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্ত। তাছাড়া ‘তবে’ বা ‘বিশেষ বিধান’ রেখে কোনো আইন প্রণয়ন করা হলে তা আইনি ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় বলেও আমরা মনে করি।

আমরা মনে করি, আইনে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার ‘বিশেষ বিধান’ রাখা হলে শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণের কারণে বাড়বে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার এবং বাড়বে নারী নির্যাতন। সর্বোপরি, বাধাগ্রস্ত হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা।

তাই, বিয়ের বয়স কমিয়ে নয়, বরং যেসব কারণে (অসচেতনতা, দরিদ্রতা ও সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি) বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয় তা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

পরিশেষে, জাতীয় স্বার্থে ‘বিশেষ বিধান’ না রেখে মেয়েদের বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ বছর বহাল রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’

উপরোক্ত বিবৃতিটি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।